আজ পৃথিবীর বায়ু কলুষিত হয়েছে করোনা ভাইরাস এর জেরে. নিজের ঘর ছাড়া আজ কোথাও গিয়ে শান্তি নেই. আর যে সমস্ত মানুষরা ঘরে বসে আছে তারা দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছে. আমরা সারাক্ষন টিভির পর্দায় কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ায় চোখ রাখছি করোনার খবর নিতে. তাই করোনা যেরকম শরীরকে আক্রমণ করছে তেমনি আমাদের মনকেও অসুস্থ করে তুলছে. আমরা সোশ্যাল মিডিয়া বা টিভিতে চোখ রাখলেই দেখতে পাচ্ছি এ সব থেকে কিভাবে নিজেকে ঠিক রাখা যায়, মানে শরীর আর মন কে সুস্থ রাখা যায়. আমরা সেইসব অনুসরণ করার চেষ্টা করছি আর তার সুফল পাচ্ছি, কিন্তু বেশিভাগ সময় আমরা নানারকম কৌশল ব্যবহার করেও শারীরিক ও মানসিক ভাবে সুস্থ থাকতে পারছি না. কেন?
প্রত্যেক মানুষের জন্য এক্সারসাইজ প্রেসক্রিপশন আলাদা, তাই বেশি এক্সারসাইজ দিয়ে শুরু করার চেষ্টা করবেন না. প্রথমে শুরু করুন ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ সমস্ত জয়েন্টের.তারপরে ধাপে ধাপে আইসোটোনিক ও আইসোমেট্রিক এক্সারসাইজ এর দিকে ঝুঁকবেন. যেকোনো ধরণের ব্যায়াম করলে ব্রেইনে ডোপামিন লেভেল বৃদ্ধি পায়, ফলে স্ট্রেস আর ডিপ্রেশন কমে যায়. তাই মাথায় রাখবেন যেকোনো ধরণের এক্সারসাইজ শুরু করলেই কিন্তু আপনি আপনার ডিপ্রেশন আর টেনশন কাটাচ্ছেন.
এবার যেটা করতে হবে সেটা হলো ব্রিথিং এক্সারসাইজ ও মেডিটেশন করুন. মেডিটেশন করার সময় আমাদের শ্বাস প্রস্বাস এর ওপর নজর রাখতে হয়, তাই চেষ্টা করুন ব্রিথিং এক্সারসাইজ আর মেডিটেশন একসাথে করতে. এতে আপনার মন শান্ত হবে এবং আপনার ফুসফুস এর ক্ষমতা বাড়বে.
কয়েকটি সহজ ব্রিথিং এক্সারসাইজ:
১. সহজ প্রাণায়াম:
সোজা হয়ে বসে নাক দিয়ে নিঃস্বাস নিন জোরে আর ছাড়ুন মুখ দিয়ে. এখানে সময় ধরে করতে হবেনা. শুধু চেষ্টা করবেন অনেকটা নিঃস্বাস নেয়া আর সেটাকে ছেড়ে দেয়া.
২. বক্স ব্রিথিং :
৪ সেকেন্ড ধরে নিঃস্বাস নিন, ৪ সেকেন্ড ধরে থাকুন, ৪ সেকেন্ড ধরে ছাড়ুন, আবার নিঃস্বাস নেয়ার আগে ৪ সেকেন্ড বিরত থাকুন. তারপর এই জিনিসটাই বার বার রিপিট করুন.
৩. ভ্রমণ প্রানায়াম :
অনেকধরণের ভ্রমণ প্রাণায়াম আছে তার মধ্যে দুটি সহজ প্রাণায়ামের কথা বলছি এখানে.চার পদক্ষেপে নিঃস্বাস নিন আর চার পদক্ষেপে নিঃস্বাস ছাড়ুন. যখন এতে অভস্থ হয়ে যাবেন তখন চার পদক্ষেপে নিঃস্বাস নিন আর ছয় পদক্ষেপে ছাড়ুন. প্রথমে এটি ১০ মিনিট পরে ৩০ মিনিট ধরে করার চেষ্টা করুন.
৪. Pursed লিপ ব্রিথিং :
নাক দিয়ে নিঃস্বাস নিন আর মুখ ছোট করে জোরে (মোমবাতি নেভাতে গেলে আমরা যেভাবে ফুঁ দিই) নিঃস্বাস ছাড়ুন.
৫. অনুলোম বিলোম:
নাক বন্ধ করে অন্য নাক দিয়ে নিঃস্বাস নিন,এবার যে নাক দিয়ে নিঃস্বাস নিলেন সেটি বন্ধ করে অপর নাক দিয়ে নিঃস্বাস ছাড়ুন, এবার যে নাক দিয়ে নিঃস্বাস ছাড়লেন সেই নাক দিয়ে নিঃস্বাস নিন, এরপর সেই নাকটি বন্ধ করে অপর নাক দিয়ে ছাড়ুন. এই প্রক্রিয়া টি সোজা হয়ে পদ্মাসনে বসে বেশ কয়েকবার ধরে করুন.
৬. ডায়াফ্রাগমেটিক ব্রিথিং:
ডায়াফ্রাম ফুসফুস থেকে পেটের অর্গানদের আলাদা করে রাখে. পেটের ঠিক মাঝখানে একটু ওপরের দিকে হাত রাখুন এবং একটু চাপ দিয়ে রাখুন, এই অবস্থায় নিঃস্বাস প্রস্বাস নিন. এই এক্সারসাইজ এর দ্বিতীয় ধাপ হলো যখন নিঃস্বাস ছাড়বেন হাতদিয়ে চাপ পেটের দিকে এবং ওপরের দিকে বাড়ান আবার নিঃস্বাস নেয়ার সময় চাপ একটু হালকা করুন, কিন্তু চাপ বজায় থাকবে. এই প্রক্রিয়াটি ৫ বার থেকে ৬ বার করা যেতে পারে. আপনি যদি নিজে চাপ না দিতে পারেন তাহলে অন্য কারোর সহায়তা নিতে পারেন, সেক্ষেত্রে শুধু খেয়াল রাখতে হবে আপনার নিঃস্বাস প্রশ্বাসের সাথে চাপ যেন ঠিকমতো দেয়া হয়.
ডায়াফ্রাগমেটিক ব্রিথিং আবার উপুড় হয়ে শুয়েও করা যায়. উপুড় হয়ে শুয়ে করলে যেখানে হাত দিয়ে চাপ দেয়া হচ্ছে সেখানে তোয়ালে রোল করে দিতে হবে.
এই এক্সারসাইজ গুলো ছাড়াও আপনারা নিজেদের মতো এক্সারসাইজ করতে পারেন, তবে তা এক্সপার্ট এর পরামর্শে হলেই ভালো.
এক্সারসাইজ করলে আমাদের নিঃস্বাস প্রশ্বাসের কী কী তফাৎ হয়?
১. পালমোনারি ভেন্টিলেশন :
পালমোনারি ভেন্টিলেশন হলো বায়ুর পরিমান যা ১ মিনিটে লাংস এ ঢোকে আর বেরোয়. সাধারণত এর পরিমান নরমাল এডাল্টদের 6liter / মিনিট (টাইডাল ভলিউম ৫০০ ml x রেসপিরেটরি রেট ১২/মিনিট). মডারেট এক্সারসাইজ এ এটি 60liter / মিনিট এবং সিভিয়ার মাস্কুলার এক্সারসাইজ এ 100liter / মিনিট পর্যন্ত হতে পারে.
২. অক্সিজেন ডিফিউসিং ক্যাপাসিটি :
এটি হলো অক্সিজেনের শরীরের(রক্তর সাথে) সাথে মেশার ক্ষমতা. সাধারণ এটি 21ml / মিনিট হয়, কিন্তু এক্সারসাইজ এ এটি বেড়ে 45ml থেকে 50ml পর্যন্ত হতে পারে.
৩. অক্সিজেন গ্রহণযোগ্যতা :
এক্সারসাইজ করলে টিসু, মাসল এ অক্সিজেন গ্রহণযোগ্যতা বেড়ে যায়.
৪. অক্সিজেন ডেবিট :
এক্সারসাইজ করার পর মাসল এ অক্সিজেন এর দরকার ৬ গুন্ বেড়ে যায়. তখন মাসল এ অক্সিজেন ঘাটতি দেখা যায়, যা সাধারণত দেখা যায় না. শরীর আস্তে আস্তে এই ঘাটতি পূর্ণ করে.
৫. রেসপিরেটরি কোশেন্ট :
শরীরে নির্দিষ্ট পরিমান অক্সিজেন গ্রহণে যে পরিমান কার্বন ডাই অক্সাইড তৈরী হয় তার রেশিও কে রেসপিরেটরি কোশেন্ট বলে. নরমাল অবস্থায় এটি ১.০. এক্সারসাইজ করলে এটি বেড়ে ১.৫ বা ২.০ অবধি হয়, এবং এক্সারসাইজ শেষ হয়ে গেলে এটি কমে ০.৫ হয়ে যায়. অর্থাৎ সমপরিমাণ অক্সিজেনের জন্য শরীর তার অর্ধেক কার্বন ডাই অক্সাইড তৈরী করে.
যেকোনোরকমের এক্সারসাইজ করতে হবে ঘরের মধ্যেই. করোনার সময় বাইরে না গিয়েও আপনি এক্সারসাইজ, ব্রিথিং এক্সারসাইজ এবং মেডিটেশন এর মাধ্যমে নিজের শরীর ও মনকে ঠিক রাখতে পারবেন.
নিঃস্বাস নিন প্রাণ ভরে, বুক ভরে, বিশ্বাসের সাথে, যে আমরা একদিন এই সংকট কাল থেকে উদ্ধার পাবোই
References:
YOGABALE ROG-AROGYA: Smt Swami Shivananda Saraswati
Essentials of Medical Physiology 6th Edition By Sembulingam
This blog written by Dr. Satyen Bhattacharyya also published in জনতার কথা (click the below link)
Comments